Summary
এক: আদুভাই ক্লাস সেভেনে পড়তেন, তবে তিনি কখনো সাফল্য অর্জন করেননি। তিনি শিক্ষক বা বন্ধুদের কাছে পরীক্ষায় নম্বর বাড়ানোর জন্য কখনো অনুরোধ করেননি। আদুভাই বিশ্বাস করতেন, তিনি সব বিষয়েই পাকা হলে প্রমোশন পাবেন। স্কুলে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন এবং পুরস্কারও পেতেন। অন্য ছাত্রদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল, তবে তিনি নিজেকে একজন কবি ও বক্তা মনে করতেন।
দুই: একদিন আদুভাই আমাকে বলতে আসে যে তাঁর ছেলে ক্লাস সেভেনে প্রমোশন পেয়েছে এবং তিনি নিজে প্রমোশন পেতে চান। ইউনি নিজের ছেলের উপর গর্বিত কিন্তু স্ত্রীর আপত্তির কারণে তিনি প্রমোশন পেতে চান। আমি শিক্ষকদের কাছে সুপারিশ করতে যাই, কিন্তু আদুভাইয়ের খাতার মান খারাপ ছিল। কষ্ট নিয়ে ফিরে আসি এবং আদুভাইকে পরিস্থিতি জানাই।
তিন: স্কুলের ছুটি শুরু হলে আদুভাই বক্তৃতা দিতে ওঠেন এবং তাঁর বক্তব্যে প্রমোশন না দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের উপর অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এতদিন ধরে তিনি স্কুলে কাটিয়েছেন এবং তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল। আদুভাই বলেন তাঁর বড় ছেলে অন্য স্কুলে চলে গেছে প্রমোশনের আশায়।
চার: আমি বিএ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম যে, একদিন আদুভাইয়ের ছেলে একটি চিঠি দিয়ে জানায়, আদুভাই অসুস্থ। ছেলের সাথে দেখা করে জানতে পারি আদুভাই মারা গেছেন। ছেলে বলেন, বাবার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর প্রমোশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং কবরের ফলকে লেখা ছিল, "এখানে ঘুমাচ্ছেন আদু মিয়া, যিনি ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাস এইটে প্রমোশন পেয়েছেন।"

এক.
আদুভাই ক্লাস সেভেনে পড়তেন। ঠিক পড়তেন না বলে পড়ে থাকতেন বলাই ভালো। কারণ, ওই বিশেষ শ্রেণি ব্যতীত আর কোনো শ্রেণিতে তিনি কখনো পড়েছেন কি না, পড়ে থাকলে ঠিক কবে পড়েছেন, সেকথা ছাত্ররা কেউ জানত না। অনেক শিক্ষকও জানতেন না বলেই বোধ হতো।
শিক্ষকের অনেকে তাঁকে 'আদুভাই' বলে ডাকতেন। কারণ নাকি এই যে, তাঁরাও এককালে আদুভাইয়ের সমপাঠী ছিলেন এবং সবাই নাকি ওই ক্লাস-সেভেনেই আদুভাইয়ের সঙ্গে পড়েছেন।
আমি যখন ক্লাস সেভেনে আদুভাইয়ের সমপাঠী হলাম, ততদিনে আদুভাই ওই শ্রেণির পুরাতন টেবিল ব্ল্যাকবোর্ডের মতোই নিতান্ত অবিচ্ছেদ্য এবং অত্যন্ত স্বাভাবিক অঙ্গে পরিণত হয়ে গিয়েছেন।
আদুভাইয়ের এই অসাফল্যে আর যে-ই যত হতাশ হোক, আদুভাইকে কেউ কখনো বিষণ্ণ দেখেনি। কিংবা নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি কখনো কোনো শিক্ষক বা পরীক্ষককে অনুরোধ করেননি। যদি কখনো কোনো বন্ধু বলেছে, 'যান না আদুভাই, যে কয় সাবজেক্টে শর্ট আছে, শিক্ষকদের বলে কয়ে নম্বরটা নিন না বাড়িয়ে।' তখন গম্ভীরভাবে আদুভাই জবাব দিয়েছেন, 'সব সাবজেক্টে পাকা হয়ে ওঠাই ভালো।'
কোন কোন সাবজেক্টে শর্ট, সুতরাং পাকা হওয়ার প্রয়োজন আছে, তা কেউ জানত না। আদুভাইও জানতেন না। জানবার কোনো চেষ্টাও করেননি। জানবার আগ্রহও যে তাঁর আছে, তা-ও বোঝবার উপায় ছিল না। বরঞ্চ তিনি যেন মনে করতেন, ও-রকম আগ্রহ প্রকাশ করাই অন্যায় ও অসংগত। তিনি বলতেন, যেদিন তিনি সব সাবজেক্টে পাকা হবেন, প্রমোশন সেদিন তাঁর কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। সে শুভদিন যে একদিন আসবেই, সে বিষয়ে আদুভাইয়ের এতটুকু সন্দেহ কেউ কখনো দেখেনি।
কত খারাপ ছাত্র প্রশ্নপত্র চুরি করে, অপরের খাতা নকল করে, আদুভাইয়ের ঘাড়ের ওপর দিয়ে প্রমোশন নিয়ে চলে গিয়েছে- এ ধরনের ইংগিত আদুভাইয়ের কাছে কেউ করলে, তিনি গর্জে উঠে বলতেন, 'জ্ঞানলাভের জন্যই আমরা স্কুলে পড়ি, প্রমোশন লাভের জন্য পড়ি না।'
সেজন্য অনেক সন্দেহবাদী বন্ধু আদুভাইকে জিজ্ঞেস করেছে, 'আদুভাই, আপনার কি সত্যই প্রমোশনের আশা আছে?'
নিশ্চিত বিজয়-গৌরবে আদুভাইয়ের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তিনি তাচ্ছিল্যভরে বলেছেন, 'আজ হোক, কাল হোক, প্রমোশন আমাকে দিতেই হবে। তবে হ্যাঁ, উন্নতি আস্তে আস্তে হওয়াই ভালো। যে গাছ লকলক করে বেড়েছে, সামান্য বাতাসেই তার ডগা ভেঙেছে।'
সেজন্য আদুভাইকে কেউ কখনো পিছনের বেঞ্চিতে বসতে দেখেনি। সামনের বেঞ্চিতে বসে তিনি শিক্ষকের প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, হাঁ করে গিলতেন, মাথা নাড়তেন ও প্রয়োজনমতো নোট করতেন। খাতার সংখ্যা ও সাইজে আদুভাই ছিলেন ক্লাসের অন্যতম ভালো ছাত্র।
শুধু ক্লাসের নয়, স্কুলের মধ্যে তিনি সবার আগে পৌঁছুতেন। এ ব্যাপারে শিক্ষক কি ছাত্র কেউ তাঁকে কোনোদিন হারাতে পেরেছে বলে শোনা যায়নি।
স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী সভায় আদুভাইকে আমরা বরাবর দুটো পুরস্কার পেতে দেখেছি। আমরা শুনেছি, আদুভাই কোন অনাদিকাল থেকে ওই দুটো পুরস্কার পেয়ে আসছেন। তার একটি, স্কুল কামাই না করার জন্য; অপরটি সচ্চরিত্রের জন্য। শহরতলির পাড়া-গাঁ থেকে রোজ-রোজ পাঁচ মাইল রাস্তা তিনি হেঁটে আসতেন বটে; কিন্তু ঝড়-তুফান, অসুখ-বিসুখ কিছুই তাঁর এ কাজে অসুবিধা সৃষ্টি করে উঠতে পারেনি। চৈত্রের কাল-বৈাশেখি বা শ্রাবণের ঝড়-কাঞ্চায় যেদিন পশুপক্ষীও ঘর থেকে বেরোয়নি, সেদিন ছাতার নিচে নুড়িমুড়ি হয়ে, বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে, আদুভাইকে স্কুলের পথে এগোতে দেখা গিয়েছে। মাইনের মমতায় শিক্ষকেরা অবশ্য স্কুলে আসতেন। তেমন দুর্যোগে ছাত্ররা কেউ আসেনি নিশ্চিত জেনেও নিয়ম রক্ষার জন্য তারা স্কুলে একটি উঁকি মারতেন। কিন্তু তেমন দিনেও অন্ধকার কোণ থেকে 'আদাব, স্যার' বলে যে-একটি ছাত্র শিক্ষকদের চমকে দিতেন, তিনি ছিলেন আদুভাই। আর চরিত্র? আদুভাইকে কেউ কখনো রাগ কিংবা অভদ্রতা করতে কিংবা মিছে কথা বলতে দেখেনি।
স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম পরীক্ষাতেই আমি ফার্স্ট হলাম। সুতরাং আইনত আমি ক্লাসের মধ্যে সবচাইতে ভালো ছাত্র এবং আদুভাই সবার চাইতে খারাপ ছাত্র ছিলেন। কিন্তু কী জানি কেন, আমাদের দুজনার মধ্যে একটা বন্ধন সৃষ্টি হলো। আদুভাই প্রথম থেকে আমাকে যেন নিতান্ত আপনার লোক বলে ধরে নিলেন। আমার ওপর যেন তাঁর কতকালের দাবি।
আদুভাই মনে করতেন, তিনি কবি ও বক্তা। স্কুলের সাপ্তাহিক সভায় তিনি বক্তৃতা ও স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। তাঁর কবিতা শুনে সবাই হাসত। সে হাসিতে আদুভাই লজ্জাবোধ করতেন না, নিরুৎসাহও হতেন না। বরঞ্চ তাকে তিনি প্রশংসাসূচক হাসিই মনে করতেন। তাঁর উৎসাহ দ্বিগুণ বেড়ে যেত।
অন্যসব ব্যাপারে আদুভাইকে বুদ্ধিমান বলেই মনে হতো। কিন্তু এই একটি ব্যাপারে তাঁর নির্বুদ্ধিতা দেখে আমি দুঃখিত হতাম। তাঁর নির্বুদ্ধিতা নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক সবাই তামাশা করছেন, অথচ তিনি তা বুঝতে পারছেন না দেখে আমার মন আদুভাইয়ের পক্ষপাতী হয়ে উঠত।
গেল এইভাবে চার বছর। আমি ম্যাট্রিকের জন্য টেস্ট পরীক্ষা দিলাম। আদুভাই কিন্তু সেবারও যথারীতি ক্লাস সেভেনেই অবস্থান করছিলেন।
দুই.
ডিসেম্বর মাস।
সব ক্লাসের পরীক্ষা ও প্রমোশন হয়ে গিয়েছে। প্রথম বিবেচনা, দ্বিতীয় বিবেচনা, তৃতীয় বিবেচনা ও বিশেষ বিবেচনা ইত্যাদি সকল প্রকারের 'বিবেচনা' হয়ে গিয়েছে। 'বিবেচিত' প্রমোশন-প্রাপ্তের সংখ্যা অন্যান্য বারের ন্যায় সেবারও পাশ করা প্রমোশন-প্রাপ্তের সংখ্যার দ্বিগুণেরও উর্ধ্বে উঠেছে।
কিন্তু আদুভাই এসব বিবেচনার বাইরে। কাজেই তাঁর কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে আমরা টিউটোরিয়েল ক্লাস করছিলাম। ছাত্ররা শুধু শুধু স্কুল-প্রাঙ্গণে জটলা করছিল- প্রমোশন পাওয়া ছেলেরা নিজেদের কীর্তি-উজ্জ্বল চেহারা দেখাবার জন্য, না-পাওয়া ছেলেরা প্রমোশনের কোনো প্রকার অতিরিক্ত বিশেষ বিবেচনায় দাবি জানাবার জন্য। এমনি দিনে একটু নিরালা জায়গায় পেয়ে হঠাৎ আদুভাই আমার পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। আমি চমকে উঠলাম। আদুভাইকে আমরা সবাই মুরুব্বি মানতাম। তাই তাঁকে ক্ষিপ্রহন্তে টেনে তুলে প্রতিদানে তার পা ছুঁয়ে বললাম, 'কী হয়েছে আদুভাই? অমন পাগলামি করলেন কেন?'
আদুভাই আমার মুখের দিকে তাকালেন। তাঁকে অমন বিচলিত জীবনে আর কখনো দেখিনি। তাঁর মুখের সর্বত্র অসহায়ের ভাব! তাঁর কাঁধে সজোরে ঝাঁকি দিয়ে বললাম, 'বলুন, কী হয়েছে?' আদুভাই কম্পিত কণ্ঠে বললেন : 'প্রমোশন।'
আমি বিস্মিত হলাম, বললাম, 'প্রমোশন? প্রমোশন কী? আপনি প্রমোশন পেয়েছেন?'
: না, আমি প্রমোশন পেতে চাই।
: ও, পেতে চান? সে তো সবাই চায়।
আদুভাই অপরাধীর ন্যায় উদ্বেগ-কম্পিত ও সংকোচ-জড়িত প্যাঁচ-মোচড় দিয়ে যা বললেন, তার মর্ম এই যে, প্রমোশনের জন্য এতদিন তিনি কারো কাছে কিছু বলেননি; কারণ, প্রমোশন জিনিসটাকে যথাসময়ের পূর্বে এগিয়ে আনাটা তিনি পছন্দ করেন না। কিন্তু একটা বিশেষ কারণে এবার তাঁকে প্রমোশন পেতেই হবে। সে নির্জনতায়ও তিনি আমার কানের কাছে মুখ এনে সেই কারণটি বললেন। তা এই যে, আদুভাইয়ের ছেলে সেবার ক্লাস সেভেনে প্রমোশন পেয়েছে। নিজের ছেলের প্রতি আদুভাইয়ের কোনো ঈর্ষা নেই। কাজেই ছেলের সঙ্গে এক শ্রেণিতে পড়ায় তাঁর আপত্তি ছিল না; কিন্তু আদুভাইয়ের স্ত্রীর তাতে ঘোরতর আপত্তি আছে। ফলে, হয় আদুভাইকে এবার প্রমোশন পেতে হবে, নয় তো পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হবে। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে আদুভাই বাঁচবেন কী নিয়ে? আমি আদুভাইয়ের বিপদের গুরুত্ব বুঝতে পারলাম। তাঁর অনুরোধে আমি শিক্ষকদের কাছে সুপারিশ করতে যেতে রাজি হলাম।
প্রথমে ফারসি শিক্ষকের কাছে যাওয়া স্থির করলাম। কারণ, তিনি একদা আমাকে মোট এক শত নম্বরের মধ্যে একশ পাঁচ নম্বর দিয়েছিলেন। বিস্মিত হেডমাস্টার তার কারণ জিজ্ঞেস করায় মৌলবি সাব বলেছিলেন, 'ছেলে সমস্ত প্রশ্নের শুদ্ধ উত্তর দেওয়ায় সে পূর্ণ নম্বর পেয়েছে। পূর্ণ নম্বর পাওয়ার পুরস্কারস্বরূপ আমি খুশি হয়ে তাকে পাঁচ নম্বর বখশিশ দিয়েছি।' অনেক তর্ক করেও হেডমাস্টার মৌলবি সাবকে এই কার্যের অসংগতি বুঝাতে পারেননি।
মৌলবি সাব আদুভাইয়ের নাম শুনে জ্বলে উঠলেন। অমন বেতমিজ ও খোদার না-ফরমান বান্দা তিনি কখনো দেখেননি, বলে আস্ফালন করলেন এবং অবশেষে টিনের বাক্স থেকে অনেক খুঁজে আদুভাইয়ের খাতা বের করে আমার সামনে ফেলে দিয়ে বললেন, 'দেখ।'
আমি দেখলাম, আদুভাই মোট তিন নম্বর পেয়েছেন। তবু হতাশ হলাম না। পাশের নম্বর দেওয়ার জন্য তাঁকে চেপে ধরলাম।
বড়ো দেরি হয়ে গিয়েছে, নম্বর সাবমিট করে ফেলেছেন, বিবেচনা স্তর পার হয়ে গিয়েছে ইত্যাদি সমস্ত যুক্তির আমি সন্তোষজনক জবাব দিলাম। তিনি বললেন, 'তুমি কার জন্য কী অন্যায় অনুরোধ করছ, খাতাটা খুলেই একবার দেখ না।'
আমি মৌলবি সাবকে খুশি করবার জন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও এবং অনাবশ্যকবোধেও খাতাটা খুললাম। দেখলাম, ফারসি পরীক্ষা বটে, কিন্তু খাতার কোথাও একটি ফারসি হরফ নেই। তার বদলে ঠাস-বুনানো বাংলা হরফে অনেক কিছু লেখা আছে। পড়া শেষ করে মৌলবি সাবের মুখের দিকে চাইতেই বিজয়ের ভঙ্গিতে বললেন, 'দেখেছ বাবা, বেতমিজের কাজ? আমি নিতান্ত ভালো মানুষ বলেই তিনটে নম্বর দিয়েছি, অন্য কেউ হলে রাসটিকেটের সুপারিশ করত।'
যা হোক, শেষ পর্যন্ত মৌলবি সাব আমার অনুরোধ এড়াতে পারলেন না। খাতার ওপর ৩-এর পৃষ্ঠে ৩ বসিয়ে ৩৩ করে দিলেন।
আমি বিপুল আনন্দে অঙ্কের পরীক্ষকের বাড়ি ছুটলাম।
সেখানে দেখলাম, আদুভাইয়ের খাতার ওপর লাল পেনসি লের একটি প্রকাণ্ড ভূমণ্ডল আঁকা রয়েছে। ব্যাপারের গুরুত্ব বুঝেও আমার উদ্দেশ্য বললাম। অঙ্কের মাস্টার তো হেসেই খুন। হাসতে হাসতে তিনি আদুভাইয়ের খাতা বের করে আমাকে অংশবিশেষ পড়ে শোনালেন। তাতে আদুভাই লিখেছেন যে, প্রশ্নকর্তা ভালো-ভালো অঙ্কের প্রশ্ন ফেলে কতগুলো বাজে ও অনাবশ্যক প্রশ্ন করেছেন। সেজন্য এবং প্রশ্নকর্তার ত্রুটি-সংশোধনের উদ্দেশ্যে আদুভাই নিজেই কতিপয় উৎকৃষ্ট প্রশ্ন লিখে তার বিশুদ্ধ উত্তর দিচ্ছে- এইরূপ ভূমিকা করে আদুভাই যে সমস্ত অঙ্কর করেছেন, শিক্ষক মহাশয় প্রশ্নপত্র ও খাতা মিলিয়ে আমাকে দেখালেন যে, প্রশ্নের সঙ্গে আদুভাইয়ের উত্তরের সত্যিই কোনো সংস্রব নেই।
প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিল থাক আর না-ই থাক, খাতায় লেখা অংক শুদ্ধ হলেই নম্বর পাওয়া উচিত বলে আমি শিক্ষকের সঙ্গে অনেক ধস্তাধস্তি করলাম। শিক্ষক-মশায়, যাহোক, প্রমাণ করে দিলেন যে, তা-ও শুদ্ধ হয়নি। সুতরাং পাশের নম্বর দিতে তিনি রাজি হলেন না। তবে তিনি আমাকে এই আশ্বাস দিলেন যে, অন্যসব সাবজেক্টের শিক্ষকদের রাজি করাতে পারলে তিনি আদুভাইয়ের প্রমোশনে সুপারিশ করতে প্রস্তুত আছেন।
নিতান্ত বিষণ্নমনে অন্যান্য পরীক্ষকের নিকটে গেলাম। সর্বত্র অবস্থা প্রায় একরূপ। ভূগোলের খাতায় তিনি লিখেছেন যে, পৃথিবী গোলাকার এবং সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, এমন গল্প তিনি বিশ্বাস করেন না। ইতিহাসের খাতায় তিনি লিখেছেন যে, কোন রাজা কোন সম্রাটের পুত্র এসব কথার কোনো প্রমাণ নেই। ইংরেজির খাতায় তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও লর্ড ক্লাইভের ছবি পাশাপাশি আঁকবার চেষ্টা করেছেন- অবশ্য কে যে সিরাজ, কে যে ক্লাইভ, নিচে লেখা না থাকলে তা বোঝা যেত না।
হতাশ হয়ে হোস্টেলে ফিরে এলাম। আদুভাই আগ্রহ-ব্যাকুল চোখে আমার পথপানে চেয়ে অপেক্ষা করছিলেন।
আমি ফিরে এসে নিষ্ফলতার খবর দিতেই তাঁর মুখটি ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
: তবে আমার কী হবে ভাই? বলে তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন।
কিছু একটা করবার জন্য আমার প্রাণও ব্যাকুল হয়ে উঠল। বললাম, 'তবে কি আদুভাই, আমি হেডমাস্টারের কাছে যাব?'
আদুভাই ক্ষণিক আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বললেন, 'তুমি আমার জন্য যা করেছ, সেজন্য ধন্যবাদ।
হেডমাস্টারের কাছে তোমার গিয়ে কাজ নেই। সেখানে যেতে হয় আমিই যাব। হেডমাস্টারের কাছে জীবনে আমি কিছু চাইনি। এই প্রার্থনা তিনি আমার ফেলতে পারবেন না।'
বলেই তিনি হনহন করে বেরিয়ে গেলেন। আমি একদৃষ্টে দ্রুত গমনশীল আদুভাইয়ের দিকে চেয়ে রইলাম। তিনি দৃষ্টির আড়াল হলে একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে নিজের কাজে মন দিলাম।
তিন.
সেদিন বড়োদিনের ছুটি আরম্ভ। শুধু হাজিরা লিখেই স্কুল ছুটি দেওয়া হলো।
আমি বাইরে এসে দেখলাম, স্কুলের গেটের সামনে একটি উঁচু টুল চেপে তার ওপর দাঁড়িয়ে আদুভাই হাত-পা নেড়ে বক্তৃতা করছেন। ছাত্ররা ভিড় করে তাঁর বক্তৃতা শুনছে, মাঝে মাঝে করতালি দিচ্ছে।
আমি শ্রোতৃমণ্ডলীর ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম।
আদুভাই বলছিলেন, 'হ্যাঁ, প্রমোশন আমি মুখ ফুটে কখনো চাইনি। কিন্তু সেজন্যই কি আমাকে প্রমোশন না-দেওয়া এঁদের উচিত হয়েছে? মুখ ফুটে না-চেয়ে এতদিন আমি এঁদের আক্কেল পরীক্ষা করলাম। দেখলাম, বিবেচনা বলে কোনো জিনিস এঁদের মধ্যে নেই। এঁরা নির্মম, হৃদয়হীন। একটা মানুষ যে চোখ বুজে এঁদের বিবেচনার ওপর নিজের জীবন ছেড়ে দিয়ে আছে, এঁদের প্রাণ বলে কোনো জিনিস থাকলে সে কথা কি এঁরা এতদিন ভুলে থাকতে পারতেন?'
আদুভাইয়ের চোখ ছলছল করে উঠল। তিনি বাম হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে আবার বলতে লাগলেন, 'আমি এঁদের কাছে কী আর বিশেষ চেয়েছিলাম? শুধু একটি প্রমোশন। তা দিলে এঁদের কী এমন লোকসান হতো? মনে করবেন না, প্রমোশন না দেওয়ায় আমি রেগে গেছি। রাগ আমি করিনি। আমি শুধু ভাবছি, যাঁদের বুদ্ধি-বিবেচনার ওপর হাজার হাজার ছেলের বাপ-মা ছেলেদের জীবনের ভার ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিত থাকেন, তাঁদের আক্কেল কত কম। তাঁদের প্রাণের পরিসর কত অল্প!'
একটু দম নিয়ে আদুভাই আরম্ভ করলেন, "আমি বহুকাল এই স্কুলে পড়ছি। একদিন এক পয়সা মাইনে কম দেইনি। বছর-বছর নতুন-নতুন পুস্তক ও খাতা কিনতে আপত্তি করিনি। ভাবুন, আমার কতগুলো টাকা গিয়েছে। আমি যদি প্রমোশনের এতই অযোগ্য ছিলাম, তবে এই দীর্ঘ দিনের মধ্যে একজন শিক্ষকও আমায় কেন বললেন না, 'আদুমিঞা তোমার প্রমোশনের কোনো চান্স নেই, তোমার মাইনেটা আমরা নেব না।' মাইনে দেওয়ার সময় কেউ বারণ করলেন না, পুস্তক কিনবার সময় কেউ নিষেধ করলেন না। শুধু প্রমোশনের বেলাতেই তাঁদের যত নিয়ম-কানুনে এসে বাঁধল? আমি ক্লাস সেভেন পাস করতে পারলাম না বলে ক্লাস এইটেও পাশ করতে পারতাম না, এ কথা এঁদের কে বলেছে? অনেকে ম্যাট্রিক-আইএ-তে কোনোমতে পাশ করে বিএ-এমএ-তে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত আমি অনেক দেখাতে পারি। কোনো কুগ্রহের ফেরেই আমি ক্লাস সেভেনে আটকে পড়েছি। একবার কোনোমতে এই ক্লাসটা ডিঙোতে পারলেই আমি ভালো করতে পারতাম, এটা বোঝা মাস্টারবাবুদের উচিত ছিল। আমাকে একবার ক্লাস এইটে প্রমোশন দিয়ে আমার লাইফের একটা চান্স এঁরা দিলেন না।"
আদুভাইর কণ্ঠরোধ হয়ে এল। তিনি খানিক থেমে ধুতির খুঁটে নাক-চোখ মুছে নিলেন। দেখলাম, শ্রোতৃগণের অনেকের গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
গলা পরিষ্কার করে আদুভাই আবার শুরু করলেন, 'আমি কখনো এতসব কথা বলিনি, আজও বলতাম না। বললাম শুধু এই জন্য যে, আমার বড়ো ছেলে এবার ক্লাস সেভেনে প্রমোশন পেয়েছে। সে-ও এই স্কুলেই পড়ত। এই স্কুলের শিক্ষকদের বিবেচনায় আমার আস্থা নেই বলেই আমি গতবারই আমার ছেলেকে অন্য স্কুলে ট্রান্সফার করে দিয়েছিলাম। যথাসময়ে, এই সতর্কতা অবলম্বন না করলে, আজ আমাকে কী অপমানের মুখে পড়তে হতো, তা আপনারাই বিচার করুন।'
আদুভাইয়ের শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল। তিনি গলায় দৃঢ়তা এনে আবার বলতে শুরু করলেন, 'কিন্তু আমি সত্যকে জয়যুক্ত করবই। আমি একদিন ক্লাস এইটে-'
এই সময় স্কুলের দারোয়ান এসে সভা ভেঙে দিল। আমি আদুভাইয়ের দৃষ্টি এড়িয়ে চুপে-চুপে সরে পড়লাম।
তারপর যেমন হয়ে থাকে- সংসার-সাগরের প্রবল স্রোতে কে কোথায় ভেসে গেলাম, জানলাম না।
চার.
আমি সেবার বিএ পরীক্ষা দেব। খুব মন দিয়ে পড়ছিলাম। হঠাৎ লাল লেফাফার এক পত্র পেলাম। কারো বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র হবে মনে করে খুললাম। ঝরঝরে তকতকে সোনালি হরফে ছাপা পত্র। পত্রলেখক আদুভাই। তিনি লিখেছেন, তিনি সেবার ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাস এইটে প্রমোশন পেয়েছেন বলে বন্ধু বান্ধবের জন্য কিছু ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করেছেন।
দেখলাম, তারিখ অনেক আগেই চলে গিয়েছে। বাড়ি ঘুরে এসেছে বলে পত্র দেরিতে পেয়েছি। ছাপাচিঠির সঙ্গে হাতের লেখা একটি পত্র। আদুভাইয়ের পুত্র লিখেছে- বাবার অসুখ, আপনাকে দেখবেন তাঁর শেষ সাধ।
পড়াশোনা ফেলে ছুটে গেলাম আদুভাইকে দেখতে। এই চার বছর তাঁর কোনো খবর নিইনি বলে লজ্জা-অনুতাপে ছোটো হয়ে যাচ্ছিলাম।
ছেলে কেঁদে বলল, "বাবা মারা গিয়েছেন। প্রমোশনের জন্য তিনি এবার দিনভর এমন পড়াশোনা শুরু করেছিলেন যে শয্যা নিলেন, তবু পড়া ছাড়লেন না। আমরা সবাই তার জীবন সম্বন্ধে ভয় পেলাম। পাড়াসুদ্ধ লোক গিয়ে হেডমাস্টারকে ধরায় তিনি স্বয়ং এসে বাবাকে প্রমোশনের আশ্বাস দিলেন। বাবা অসুখ নিয়েই পাল্কি চড়ে স্কুলে গিয়ে শুয়ে-শুয়ে পরীক্ষা দিলেন। আগের কথামতো তাঁকে প্রমোশন দেওয়া হলো। তিনি তাঁর 'প্রমোশন-উৎসব' উদ্যাপন করবার জন্য আমাকে হুকুম দিলেন। কাকে কাকে নিমন্ত্রণ করতে হবে, তার লিস্টও তিনি নিজহাতে করে দিলেন। কিন্তু সেই উৎসবে যাঁরা যোগ দিতে এলেন তাঁরা সবাই জানাজা পড়ে বাড়ি ফিরলেন।"
আমি চোখের পানি মুছে কবরের কাছে যেতে চাইলাম।
ছেলে আমাকে গোরস্তানে নিয়ে গেল। দেখলাম, আদুভাইয়ের কবরে খোদাই করা মার্কেল-পাথরের ট্যাবলেটে লেখা হয়েছে-
Here sleeps Adu Mia who was promoted
from Class VII to Class VIII.
ছেলে বলল, 'বাবার শেষ ইচ্ছামতোই ও-ব্যবস্থা করা হয়েছে।'
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
মনির পর পর দুই বার এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করে। শিক্ষকরা ভাবে ওর দ্বারা আর পাস করা সম্ভব নয়। কিন্তু মনির অনেক পরিশ্রম করে তৃতীয়বার পরীক্ষা পাশ করে।
আবুল মনসুর আহমদের জন্ম ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে। তিনি পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। সাহিত্য-সাধনার মাধ্যমে কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজকে সচেতন করে তোলাই ছিল তাঁর সারা জীবনের ব্রত। ব্যঙ্গধর্মী রচনার জন্য তিনি বিশেষ খ্যাতি পেয়েছেন। আবুল মনসুর আহমদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে 'আয়না', 'আসমানী পর্দা', 'ফুড কনফারেন্স', 'গালিভারের সফরনামা' ইত্যাদি। সাহিত্যচর্চায় অবদান রাখার জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন। আবুল মনসুর আহমদ ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
আদু মিয়া ওরফে আদুভাই ক্লাস সেভেনে পড়তেন। স্কুলে তিনি ছিলেন নিয়মিত, চাল চলন ও আচার-আচরণে ছিলেন সবার প্রিয়। কিন্তু পরীক্ষায় পাশ করতে পারতেন না। তাঁর সহপাঠীদের অনেকে স্কুলের শিক্ষক পর্যন্ত হয়েছেন কিন্তু আদুভাই আর প্রমোশন পাননি। তাঁর ধারণা, ভালোভাবে পড়াশোনা করে তবেই না প্রমোশন। তাই তিনি পরীক্ষার উত্তরপত্রে নিজের মতো উত্তর করতেন, কখনো প্রশ্নও জুড়ে দিতেন। ফলে প্রমোশনও তাঁর মিলত না। কিন্তু আদুভাইয়ের ছেলে যখন অন্য একটা স্কুলে ক্লাস সেভেন পাশ করতে যাচ্ছে, তখন তিনি প্রমোশনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন। এবার তিনি শুরু করলেন কঠোর পরিশ্রম। পরিশ্রমের ধকলে ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় আদুভাই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ক্লাস সেভেন থেকে এইটে প্রমোশন পেলেন ঠিকই, তবে প্রমোশনের আনন্দ উদ্যাপনের দিনই তিনি মারা গেলেন।
গল্পটির ভেতর দিয়ে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে লেখক দেখিয়েছেন, জ্ঞানার্জনের পথে বয়স কোনো বাধা নয়। আবার কোনো বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট স্তরে স্থির থাকাও যুক্তিযুক্ত নয়।
সমপাঠী - সহপাঠী।
অবিচ্ছেদ্য - যা বিচ্ছেদ বা বিচ্ছিন্ন করা যায় না।
বিষণ্ণ - বিষাদযুক্ত, দুঃখপ্রাপ্ত।
সাবজেক্ট - বিষয়। ইংরেজি Subject.
শর্ট - কমতি, কম। ইংরেজি Short.
বরঞ্চ - বরং।
প্রমোশন - এক শ্রেণি থেকে অপর শ্রেণিতে উন্নীত। ইংরেজি Promotion.
সন্দেহবাদী - কোনো বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন যিনি।
তাচ্ছিল্য - তুচ্ছ জ্ঞান, অবহেলা।
অনাদিকাল - আদিকাল থেকে।
সচ্চরিত্র - ভালো স্বভাব।
স্বরচিত - নিজের লেখা।
নিরুৎসাহ - উৎসাহ নেই এমন।
টেস্ট পরীক্ষা - চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে বাছাই পরীক্ষা।
টেস্ট পরীক্ষা - চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে বাছাই পরীক্ষা।
টিউটোরিয়েল - পর্যালোচনামূলক শ্রেণি-কার্যক্রম। ইংরেজি Tutorial.
ক্ষিপ্রহন্তে – দ্রুত হাতে।
উদ্বেগ - দুশ্চিন্তা।
অসংগতি - সংগতির অভাব, যুক্তিহীনতা।
বেতমিজ - শিষ্টাচার জ্ঞান নেই যার।
না-ফরমান বান্দা - আদেশ অমান্যকারী ব্যক্তি।
আস্ফালন - ক্ষোভের সঙ্গে লাফালাফি।
গাঁজাখুরি - অবিশ্বাস্য।
নিষ্ফলতা - যে কাজের কোনো ফল নেই।
একদৃষ্টে - অপলক চোখে।
রাসটিকেট - একধরনের শান্তি। স্কুল-কলেজে পড়া বাতিল করে দেওয়া। ইংরেজি Rusticate.
ভূমণ্ডল - পৃথিবী, ভূভাগ। এখানে পৃথিবীর মতো দেখতে গোলাকার 'শূন্য' বোঝানো হয়েছে।
পরীক্ষক - পরীক্ষা করেন এমন ব্যক্তি। পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখেন এমন ব্যক্তি।
ফ্যাকাশে - বিবর্ণ, অনুজ্জ্বল।
সংস্রব - সংযোগ, সম্বন্ধ, মিল।
শ্রোতৃমণ্ডলী - শ্রোতাবৃন্দ।
প্রবল স্রোত - তীব্র স্রোত।
লেফাফা - খাম, মোড়ক।
পাড়াসুদ্ধ - পাড়ার সকলে।
ট্যাবলেট - কবরফলক, যাতে মৃতব্যক্তি বিষয়ে কিছু লেখা থাকে। ইংরেজি Tablet. 'Here sleeps Adu Mia who was promoted from Class VII to Class VIII'- 'এইখানে ঘুমিয়ে আছেন আদুমিয়া, যিনি সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পেরেছিলেন।'
Read more